Kousik Das C P I M এবং হঠকারী বামপন্থী রাজনীতির সেকাল একাল ... ~ Kousik's Diary

Thursday 5 December 2013

C P I M এবং হঠকারী বামপন্থী রাজনীতির সেকাল একাল ...


ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্ক্সবাদী ) ত্রিপুরা বাদে সমস্ত ভারতে রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হওয়ার পর্যায় । পশ্চিম বাংলার ক্ষেত্রে সি পি এম টিকে আছে শুধু শহর গুলোর পার্টি অফিস আর মিডিয়া তে । যে সি পি এম এক সময় পশ্চিম বঙ্গের সমস্ত বাড়ির হাড়ির খবর জানতো , আজকে তাদের একটি পতাকা গ্রাম বাংলার বুকে খুঁজে বের করা দুস্কর । এককালে যারা সিংহ সেজে মানুষকে রক্ত চক্ষু দেখিয়ে ফিরত , আজকে তারা ইঁদুর সেজে গর্তে ঢুকে আছে । বাংলার অধিকাংশ সি পি এম পার্টি অফিস হয় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে , নয় সবুজ রং করে নেওয়া হয়েছে । সর্ব ভারতীয় ক্ষেত্রে সি পি এম এর তিন রাজ্যের রাজনীতির থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বেশি প্রাসঙ্গিক  ।, নতুন কোনও রাজ্যেও সি পি এম এর শক্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ । এমতাবস্থায় সি পি এম এর চিরকালের দক্ষিনপন্থি দের সাথে আন্ডার স্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে । পশ্চিম বঙ্গের ক্ষেত্রে সি পি এম কংগ্রেসের চাকর সি বি আই দিয়ে তৃণমূলের পর্দা ফাস করাতে চাইছে, কংগ্রেসের সাথে গলা মিলিয়ে বিধানসভা বয়কট করছে। আর সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা কে রুখতে সাম্রাজ্যবাদী কংগ্রেসের সুবিধা করে দিতে স্রেফ ভোটের রাজনীতি করার জন্য কনভেনশন ডাকছে । মার্ক্সবাদের স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদ কে সাম্প্রদায়িকতা থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । এর কারন পড়ে বিশ্লেষণে আসবো । কিন্তু নামের পাশে মার্ক্সবাদী লিখে মার্ক্সবাদের নামে যে কালিমা সি পি এম লিপ্ত করছে , তার থেকে তাদের রাজনৈতিক তুঘলিকি বৃত্তি আর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে আজ অজানা নয় । একটা সময় ঠিক করেছিলাম , প্রবন্ধের শিরনাম দেবো “ নির্লজ্জতার অপর নাম C P I M “ কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে আটকে যাই ।

কংগ্রেস সাম্রাজ্যবাদী । এই সুত্রের ওপর ভিত্তি করেই সি পি এম এর বড় হয়ে ওঠা । সি পি আই এর সাথে বিরোধ , খাদ্য আন্দোলন , নকশাল দের গল্প সকলেরই জানা । জন্মের পর থেকেই সি পি এম তার শত্রু হিসাবে কংগ্রেস কে ধরে নিয়ে বিরোধিতা ও আন্দোলনের মাধ্যমে জনসমর্থন গড়ে তোলে । এরপর সময় এলো বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতার মধু ভোগ করার । কিন্তু ১৯৬৭ ও ১৯৭০ এ পর পর যখন যুক্ত ফ্রন্ট সরকার কে গদি থেকে নামানো হল । শুরু থেকেই সি পি এম এর নীতি গত কিছু দুর্বলতা থাকায় সি পি এম হয়ে উঠল ক্ষমতা পিপাসু । তাই দু দুবার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সি পি এম ক্ষমতাসীন থাকার উদ্দেশ্যে বুর্জোয়া গোষ্ঠীর সাথে সেই “ আন্ডারস্ট্যান্ডিং “ এর রাজনীতি শুরু করলো ।

একটি বামপন্থী দল জন সমর্থন পায় মূলত শ্রেণী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে । বামপন্থী দলের মূল শক্তি থাকে শোষিত শ্রেণী ও তার সমর্থন । আর এই সমর্থন লাভের জন্য বামপন্থী দল গুলো কে লড়াই করতে হয় আপোষহীন ধারায় , শোষক শ্রেণী কে চ্যালেঞ্জ করে । আর লড়াই হতে হয় শোষিত শ্রেণীর স্বার্থে , তার দাবী দাওয়া ও অধিকার অর্জনের লক্ষে । শুরুর দিকে হয়েছিলো তেমনটাই । তবে ক্ষমতাসীন থেকে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি করতে গিয়ে এই মাঠে ময়দানের আন্দোলন সি পি এম এর পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না । তাই সমর্থন আর গনভিত্তি হারানোর সম্ভাবনাও ছিল প্রবল ।

তাই এখন একটাই পথ ছিল খোলা । কংগ্রেস , বিজেপির মতো দলগুলি যেভাবে জনতার মাঝে তাদের প্রভাব ধরে রাখে , ঠিক সেই দক্ষিন পন্থি পদ্ধতি অনুসরন করলো সি পি এম । অর্থাৎ ছিটে ফোঁটা ক্ষমতার মধু বিতরনের মাদ্ধ্যমে । জ্যোতি বাবুর মতো বিচক্ষন মানুষ এর সূক্ষ্ম পদ্ধতিও অবশ্য বের করে ফেলেছিলেন । সেটি ছিল ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যাবস্থা । এর মাধ্যমে মধু বিতরেনের দক্ষিন পন্থি পদ্ধতি আম জনতাকে ক্ষমতা দেওয়ার বাম পন্থি ইমেজ ধরে রেখে প্রচলন করা অবশ্যই কাবিলে তারিফ । আর এই জনপ্রভাব বজায় রাখার সুন্দর বাম ইমেজের দক্ষিন পন্থি পদ্ধতি রাজীব গান্ধি করে নিলেন রোল মডেল ।

কিন্তু দক্ষিনপন্থি এই পদ্ধতি যেখানে সমর্থনের বেস আছে সেখানেই কার্যকর । কিন্তু আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি নতুন করে মাঠে ময়দানে থেকে সমর্থন তৈরিতে বাঁধা দেয় । তাই দুই তিনটা রাজ্য ছারা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সি মি এম এর বিকাশ স্তব্ধ হয়ে যায় । স্বাভাবিক ভাবেই কেদ্রিয় রাজনীতির মূল ধারায় সি পি এম এর গুরুত্ব কমতে থাকে । তাই তখন দক্ষিন পন্থি দের আর একটু ঘেঁসে কেন্দ্রিয় রাজনীতিতে সি পি এম নতুন বন্ধু হিসাবে খুঁজে নেয় বি যে পি কে ৮৯ সালে ।

কিন্তু সংসার বেশিদিন টিকলো না । কংগ্রেসের পালে যখন মন্দার হাওয়া , তখন ৯২ সালে বিজেপি ঘটাল বাবরি মসজিদের কাণ্ড । ব্যাস পাওয়া গেলো সুযোগ । এখন সি পি এম এর সামনে বড় শত্রু সাম্রাজ্যবাদ নয় , শত্রু হয়ে উঠল সাম্প্রদায়িকতা । কিন্তু মার্কসবাদ তো উলট পুরাণ ই শোনায় । মার্ক্সবাদের প্রধান দুটো দ্বন্দ্ব মূলক বিষয় হল কাঠামো ও উপরিকাঠামো , বেস ও সুপারস্ট্রাকচার । এই ক্ষেত্রে অর্থনীতি হল কাঠামো , রাজনীতি , দর্শন , সংস্কৃতি হল উপরিকাঠামো । বেস এর ভিত্তিতেই যেহেতু সুপারস্ট্রাকচার তৈরি হয় , তাই মার্ক্সবাদ সর্বদা বেস কেই প্রাওরিটি দিয়ে থাকে । ভারতের রাজনীতির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ হল , একটি অর্থনৈতিক বিষয় ,অর্থাৎ বেস আর সাম্প্রদায়িকতা হল সংস্কৃতি গত বিষয় অর্থাৎ সুপারস্ট্রাকচার । তাই সাম্রাজ্যবাদ এর থেকে বড় শত্রু কখনোই সাম্প্রদায়িকতা নয় । কিন্তু আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি তে এতো ভাবলে চলে না। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে হলে যার পালে হাওয়া , তাকেই আঁকড়ে ধরতে হবে । এখন সি পি এম এর সঙ্গি হল কংগ্রেস । এর ফলে দক্ষিনপন্থি উপায় ধরেই , আন্দোলন ছারাই কেন্দ্রিয় রাজনীতি তে সি পি এম এর গুরুত্ব বাড়তে থাকে , ২০০৪ এ যার আমরা চুরান্ত রূপ দেখতে পাই ৫০ + আসন লাভের মধ্য দিয়ে  ।

বাম্পন্থার আদর্শ নিয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে বেড়ে ওঠা দলটা দক্ষিন পন্থি শর্টকাটে আচমকাই ফুলে ফেঁপে উঠল । একদিকে বেসরকারিকরণ রুখে যেমন তার হিরো সাজছিল , তেমনি সেজ আইন নিরবে মেনে নিয়ে , ডি এফ আই ডি এর টাকায় নিজেদের শাসিত রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের শ্রমিক কর্মচারী দের ভি আর এস দিয়ে খুচরো ব্যাবসায় বড় পুঁজি ঢোকার ব্যাপারে নিরব থেকে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি টাও চালিয়ে যাচ্ছিল । সোশ্যাল ডেমোক্রেসির পালে বাতাস যখন ভরপুর , তখনি অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ কে সত্য করে ঘটে গেলো সিঙ্গুর নন্দিগ্রাম । আন্ডার স্ট্যান্ডিং এর রাজনীতির সাথেই যে বাম ইমেজ টা সি পি এম ধরে রেখেছিল , তা রাতারাতি উধাও হয়ে তাদের দক্ষিনপন্থি বুর্জোয়া রাজনীতির নগ্ন রূপ দেশবাসীর সামনে প্রকাশিত হয়ে গেলো ।

বাম ইমেজ এর মেকাপ যখন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবার মুখে , তখনি আবার তার ওপর চন্দনের প্রলেপ দেওয়ার উপায় হিসাবে কারাত রা খুঁজে বের করলেন পরমানু চুক্তি ইস্যু । যার সর্বশেষ ফলাফল সমর্থন প্রত্যাহার । বাম ইমেজ তেমন একটা পুনরুদ্ধার না হলেও বুদ্ধ বাবু দের ক্ষমতার কাছা কাছি থেকে আন্ডার স্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি করার প্রত্যাশা এতে হুমকির মুখে পড়ল । তখনি আসলো “ দ্যা থার্ড ফ্রন্ট “ আইডিয়া ।

দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা টা যে বিপদজনক তা আরও একবার বুঝিয়ে কংগ্রেস হাওয়ায় তৃতীয় বিকল্প উপহাসের বিষয়ে পরিনত হল লোকসভা নির্বাচনে । বাম রাজনীতি , ও ক্ষমতার কাছা কাছি থেকে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর রাজনীতি করা দুটো স্ববিরোধী বিষয় । কংগ্রেস কে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়ে তারা এই বিরধের একটা আপাত সমাধান বের করে নিয়েছিলেন , যেখানে সাফল্যের ভাগিদার হওয়া যায় , কিন্তু ব্যর্থতার নয় । কিন্তু রাজনীতি যদি এতই সোজা হতো , কবেই না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতেন ... বুর্জোয়া শ্রেণী তখনি ক্ষমতা ভোগ করতে দেবে , যখন তার নির্দেশ মতো শিল্পায়নের জন্য লাঠি গুলি চলবে , গণ আন্দোলন দমন হবে । আর সেটাই হল সিঙ্গুর ও নন্দিগ্রামে । এই এক নৌকাতেই চলতে থাকলে হয়তো  মার্ক্সবাদী নাম টা পার্টি কংগ্রেস ডেকে মুছে দিতে হতো , কিন্তু কেন্দ্রিয় রাজনীতি তে টিকে থাকা যেত , খমতাও ভোগ করা যেত । কিন্তু কারাত বাবু রা বাম ইমেজ হারাতে নারাজ । তাই পরমানু ইস্যু তে সমর্থন প্রত্যাহার করে ওপর নৌকা তে এক পা দিয়েই দিলেন ।

এই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার চুরান্ত পরিণতি হল পশ্চিমবাংলা ও কেরলের বিধানসভা নির্বাচনে । ক্ষমতায় থাকার দক্ষিনপন্থি , আন্দোলনের মাধ্যমে গণসমর্থন ধরে রাখার বামপন্থী এই দুই নৌকার মাঝে যে শুধু ভরাডুবি পন্থা রয়েছে , তা প্রমাণিত হল এই নির্বাচনে । বাংলায় খাবারের অভাব নেই , তাই পুঁজি বাংলার মানুষের আগা গোঁড়াই না পসন্দ । তাই বাংলার ক্ষেত্রে এই নির্বাচন ও হয়েছে বামপন্থী ইস্যু তেই । শুধু নামে বামপন্থী রা কাজে ডান পন্থি ভুমিকা নিলেন , আর ডান পন্থি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুযোগ বুঝে একটি বামপন্থী নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করে ফেললেন ।  যারা সি পি এম এর হয়ে মিছিল করলো , তারাই আবার তৃনমূল কে ভোট দিল ।

কাজেই বোঝাই যাচ্ছে ভরাডুবি পন্থায় চললে কি হতে পারে ভবিষ্যৎ । দুই পথের মধ্যেই কোনও একটা বেঁছে নিয়েই চলতে হবে সি পি এম কে । একটা দক্ষিনপন্থায় মিশে গিয়ে কংগ্রেস বিজেপির মতো অলটারনেটিভ পাওয়ারে পরিনত হওয়া , এতে জনসমর্থন ঘুরে ঘুরে আসবে আর ক্ষমতাও মাঝে মাঝে পাওয়া যাবে । আর একটা গণ আন্দোলনের পথ , এই পথে সলিড জন সমর্থন আর বিকাশের ভিত্তি পাওয়া যাবে , তবে এই পথ রক্ত আর ঘামে পিচ্ছিল ।

কিন্তু সি পি আই এম এর নেতা কর্মী রা যে এখনো বাম সি পি এম ঘরানার বাম পন্থা নিয়ে মেতে আছেন , তাতে দুঃখজনক হলেও ভবিষ্যতে তারা আদর্শের বালাই ভুলে দক্ষিন পন্থাকেই তাদের রাজনীতির স্রোত হিসাবে আপন করে নেবে বলেই মনে হচ্ছে । আজকের এই সি পি এম এর ভরাডুবির পর যে মতাদর্শ গত আত্ম সমিক্ষা তারা চালাচ্ছে তাতে সৎ নেতা , কর্মী দের অনেকের মনেই বিপ্লব শব্দ টা ভেসে উঠেছে । ভবিষ্যতে তারা হয় হতাশ হয়ে দল ছাড়বেন , অন্যথায় প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টায় নিজের মতো করে নতুন যুক্তি সাজিয়ে নেবেন , যা ইতি মধ্যেই অনেকে শুরু করেছেন । 

0 comments:

Post a Comment

© 2013 Kousik's Diary , AllRightsReserved.

Designed by Kousik Das